কক্সবাজার টাইমস২৪:
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবির পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়হীন দেড় শতাধিক পরিবারকে বিভিন্ন নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট ও ক্যাম্প ওয়েস্টের মাঝি মো. রফিক বলেন, ‘শিবিরে ৮২ হাজার মানুষ রয়েছে। অধিকাংশ ঘরগুলো খুবই দুর্বল। সামান্য বাতাসে নড়াচড়া করতে থাকে। এসময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতে অর্ধশতাধিক ঘর ভেঙে গেছে এবং পানিতে ২০০-এর বেশি ঘর ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। নিজেদের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামতের কাজ চলছে।’টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপনকারী স্থানীয়দেরও সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইসচিআর) মুখপাত্র মোস্তফা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়হীন ১২০টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে, দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পুরোনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু শূন্যরেখায় আরও একটি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবির পানিতে ডুবে গেছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু খাল ঘেঁষা কোনারপাড়া শূণ্যরেখায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তারা সেখানে আটকা পরে। বিশেষ করে সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমার কাঁটাতারের একটি ব্রিজ নির্মাণের কারণে বৃষ্টির পানি সহজে চলাচল করতে পারছে না। ফলে পানিতে নলকূপ, টয়লেটসহ রোহিঙ্গা শিবিরটি ডুবে আছে। সেখানকার উত্তর দিকে ছোট একটি ছড়া (ছোট খাল) প্রবাহিত হচ্ছে। ছড়ার একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শূন্যরেখাকে আলাদা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের গোটা আশ্রয় শিবির কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। নিচু এলাকার ঘরবাড়ি একেবারে ডুবে যাওয়ায় সেখানে বসবাসরতরা আশ্রয়হীন হয়ে পরেছে। সেখানে এক হাজারে বেশি পরিবারের ৫ হাজার মানুষ রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার নতুন করে কাঁটাতারের ব্রিজ নির্মাণের কারণে পুরো শিবিরটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখানকার আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে টেকনাফের শালবন, লেদা, জাদিমুড়া, নয়াপাড়া, উখিয়া কুতুপাং, বালুখালী, ক্যাম্প-১ ইস্ট ও ক্যাম্প ওয়েস্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে টানা বৃষ্টিতে কাদা ও নর্দমার পানিতে চলাচলের পথে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সেখানে বাস করা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, আগের রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরের তিন শতাধিক পরিবারের ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন অনেকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিসংখ্যান আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যেবস ক্যাম্পে বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। আর যারা আশ্রয়হীন হয়েছেন, তাদের স্ব স্ব ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।’ যারা এখনও অতিঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করেও সরিয়ে নেওয়ার হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply