1. khaircox10@gmail.com : admin :
কেরামত আলীর বইমেলা; বাঁশ ও বান সমাচার ! - coxsbazartimes24.com
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রোগীদের সেবায় এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখন কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ অফিস সংলগ্ন নালা দখল করে মাটি ভরাট ফাসিয়াখালী মাদরাসার দাতা সদস্য পদে জালিয়াতি! প্রকাশিত সংবাদে পাহাড়তলীর আবদুর রহমানের প্রতিবাদ কক্সবাজার হজ কাফেলার উদ্যোগে হজ ও ওমরাহ কর্মশালা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ রোহিঙ্গা রেসপন্সে বিশ্বব্যাংকের ঋণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকার-ভিত্তিক সুশীল সমাজ হযরত হাফসা (রাঃ) মহিলা হিফজ ও হযরত ওমর (রাঃ) হিফজ মাদ্রাসার দস্তারবন্দী অনুষ্ঠান নারী দিবসের অঙ্গীকার, গড়বো সমাজ সমতার – স্লোগানে মুখরিত কক্সবাজার প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে পেশকার পাড়ার ফরিদুল আলমের প্রতিবাদ

কেরামত আলীর বইমেলা; বাঁশ ও বান সমাচার !

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০
  • ৩১৫ বার ভিউ

আতিকুর রহমান মানিক:
বইপ্রিয় মানুষ কেরামত আলী৷ ছাত্র জীবন ও কর্মজীবনে তার অবসর সময়টা বেশীরভাগই কেটেছে বই পড়ে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অন্যান্য বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকত কেরামত৷ শিক্ষক পিতা ঢাকা-চট্রগ্রাম গেলেই শিক্ষামূলক বিভিন্ন বই নিয়ে আসতেন, তাই ছোটকাল থেকেই বইপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে তার।

ছাত্রজীবনে প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা একুশে বইমেলায় যেত কেরামত। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে বই মেলায় নিজকে হারিয়ে ফেলত সে। ছাত্র মানুষ, অর্থকষ্ট সত্বেও বিভিন্ন ষ্টলে ঘুরে ব্যাগভর্তি বই কিনে নিয়ে আসত। এভাবেই গড়ে উঠেছিল তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীটা।

তো এক বছর হল কি, ফেব্রুয়ারী মাস চলে যাচ্ছে, কিন্তু মালপানি (টাকা) সেক্টরে চলছে ভয়াবহ খরা। যে কারনে বইমেলায় যাওয়া হয়নি। এদিকে বইমেলা থাকবে আর মাত্র দুইদিন, এর মধ্যেই যেতে হবে।

কিন্তু বাবাকে বলতেই রাম ধমক !
উভয় সংকটে পড়ল বেচারা কেরামত।

শেষে একান্ত নিরুপায় হয়েই দুঃসাহসী এক সিদ্ধান্ত নিল কেরামত। গৃহপালিত দুটি ছাগল (গোপনে) জায়গামত ডেলিভারী দিয়ে ঐ টাকা নিয়ে ভোরেই ঢাকাগামী বাসে উঠে বসল ও শেষ বিকালে ঢাকা পৌঁছাল। এরপর সোজা বইমেলায় গিয়ে ষ্টল টু ষ্টল ঘুরাঘুরি, চটপটি-ফুচকা ও ব্যাগভর্তি বই।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে !!

বই কিনে সে রাতেই বাসে উঠে পরদিন ভোরে বাড়ীতে পৌঁছাল। এভাবে গেরিলা কায়দায় “বই মেলা দর্শন ও ক্রয় মিশন” শেষে বাড়ীতে পৌঁছল সে। কিন্তু চারদিকের পরিবেশ দেখে টের পেল “সামথিং হ্যাজ বিন রং” !

বাড়ীর গুমোট আবহাওয়া দেখে মনে মনে ঘাবড়ে গেল কেরামত। শুনল, ছাগল সংক্রান্ত ব্যাপারে নাকি ইতিমধ্যেই (আনলিমিটেড মাইরের) দন্ড ঘোষনা হয়ে গেছে।

তাই আপীল আদালতের দ্বারস্হ হল সে। তার বড় আম্মা অর্থাৎ জেঠাইমা ছিলেন বাড়ীর বড় বৌ, বিধায় সবার মুরুব্বী। এখানে আপীল আদালত তিনি । কেরামতের আব্বার কঠোর ও একনায়কতান্ত্রিক শাসন থেকে যৎসামান্য আশ্রয়-পশ্রয়ের ঠিকানা ছিলেন বড় আম্মা। সবার মুরুব্বী ও বর্ষীয়সী বড়মা’র সামনে কেরামতের বাবার জারিজুরি তেমন একটা খাটেনা বললেই চলে।

কারন শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর ছোট দেবর (কেরামতের আব্বা)কে মায়ের মমতায় মানুষ করেছিলেন তিনি। তাই বড় ভাবীর সামনে জোর গলায় কথা বলতনা তার আব্বা। সুতরাং বড় মা’র সামনে কেরামতের বাবা শাসনেও তেমন সুবিধা করতে পারতেননা। আর এতেই লাই পেয়ে যেত ডানপিটে ও দুরন্ত কেরামত।

যাই হোক, আপীলের আরজিতে আত্নপক্ষ সমর্থন করে মোটামুটি আশ্বস্ত হল সে৷ আপীল শুনানী রাতে হবে, আপাততঃ নিজকে নিরাপদ মনে করে দুপুরে খেয়ে দেয়ে সদ্যক্রয়করা বই থেকে একটি নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে পড়া শুরু করল কেরামত।

গতরাতের প্রায় সারারাতই নির্ঘুম কেটেছে গাড়ীতে, তাই ঘুমে দু চোখ বুজে আসতে চাচ্ছে। এর মধ্যেই কেরামত যেন আবছাভাবে দেখল কোথাও যেন অনুষ্ঠান হচ্ছে আর এতে বিকট শব্দে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হচ্ছে। তখনকার ক্রেজ ছিলেন অর্ক ব্যান্ডের ভোকাল হাসান। হাসানের কন্ঠে “চারিদিকে উৎসব পরিপূর্ণ নিয়ন আলোয়” শীর্ষক গানও যেন বাজছে।

এত উৎসব আমেজের মধ্যেও কিন্তু পিঠে সামথিং ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেন ? এমন সময় আরেকটা পটকা ফুটানোর বিকট শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে খাটের সামনেই প্রমান সাইজের আস্ত বাঁশ হাতে বাবাকে আবিস্কার করে কেরামত। তাকে বাঁশ দিয়ে পেটানোর শব্দকেই ঘুমের ঘোরে এতক্ষন পটকার আওয়াজ মনে করেছিল সে !!

তাই আরেকপ্রস্হ মাইর শুরু হওয়ার আগেই কোন রকমে দৌঁড়ে পালাল কেরামত আলী। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলায় আপীল শুনানীর আগেই নিম্ন আদালতের দন্ড বাস্তবায়নের এরকম নজীর আসলে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই শামিল। ফ্যামিলির বিচার ব্যবস্হা এরকম ভেঙ্গে পড়ার কথা ভাবতেই ভাবতেই দৌঁড়ানো অবস্হায় কেরামত তার বাবাকে বলতে শুনল “ছাগলে ছাগল চিনল কেমনে” !

যাই হোক, কেরামত এখন কর্মজীবনে। চাইলেই অ-নে-ক বই কিনতে পারে। ঢাকায় নয়, এখন বছরে কয়েকবার কক্সবাজারে তার বাসার কাছেই অনুষ্ঠিত হয় সপ্তাহব্যাপী বইমেলা।
কিন্তু ব্যস্ততার কারনে বই দেখা ও কেনার সময় হয়না।
আগে সাধ ছিল সাধ্য ছিলনা। কিন্তু এখন
সাধ্য আছে, সাধ নেই।
আসলে সময় বদলে দেয় মানুষকে, মানসিকতাকে।

( পুনশ্চ – কয়েকদিন আগে সর্বনাশা বন্যা। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের বাড়ীতে বানের পানি উঠেছিল। এতে তিল তিল করে গড়ে তোলা সাধের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির প্রায় সবগুলো বই ভিজে একাকার। দুর্লভ অনেক বই শেষ হয়ে গেছে, এগুলো এখন বাজারেও নেই। বন্যার সবচেয়ে বড় ক্ষতি এটা, যা পুরন হওয়ার নয়। লাইব্রেরীটা কি আর গড়ে উঠবে ?)

 

আতিকুর রহমান মানিক
ফিশারিজ কনসালটেন্ট ও সংবাদকর্মী, কক্সবাজার।

খবরটি সবার মাঝে শেয়ার করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2020 coxsbazartimes24
Theme Customized By CoxsTech