ডেস্ক নিউজ:
হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের হাটহাজারীর সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা ও দাফন নিজ কর্মস্থলেই হবে।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে একমাত্র জানাজা শেষে মাদ্রাসার ভেতরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদ কবরস্থানে দেশ বরেণ্য এ আলেমকে দাফন করা হবে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক শেষে মুফতি জসিম উদ্দিন এসব তথ্য মাদ্রাসার মাইকে ঘোষণা দেন। একই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে আহমদ শফীর মরদেহের সাথে থাকা পুত্র আনাস মাদানীও। পিতা আহমেদ শফীর জানাজা পড়াবেন পুত্র আনাস মাদানীই।
এদিকে মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে রাত সাড়ে এগারোটার পর হাটহাজারীর উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে এশার নামাজের পর আজগর আলী হাসপাতালে আল্লামা আহমদ শফীর কাফন সম্পন্ন করা হয়। রাতে মরদেহ নিয়ে রওনা দেওয়ার পর শনিবার ফজরের নামাজের পর মাদ্রাসার মাঠে উন্মুক্তভাবে তার মরদেহ সবাইকে দেখানো হবে।
এদিকে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে সাংবাদিকদের আনাস মাদানী বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর বিশ্বাস ছিল, জানাজা একটা হওয়াই উত্তম। সে হিসেবে আমরা একটি জানাজার পক্ষে, ঢাকায় কোনও জানাজা হবে না এবং মরদেহ সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।’
আহমদ শফীর মৃত্যুর পর শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরীর সাথে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার এসপি রশিদুল হক, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম, র্যাব ৭ সিপিসি-২ হাটহাজারী ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মুশফিকুর রহমানসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এসময় মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী বলেন, ‘আমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, কাল (শনিবার) জোহরের নামাজের পর বড় হুজুরের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। যতটুকু জানতে পেরেছি হুজুরের কনিষ্ঠপুত্র হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক সহকারী শিক্ষা সচিব আল্লামা মাওলানা আনাস মাদানী জানাজা পড়াবেন।’
এর আগে, শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের এম্বুলেন্স যুগে হেফাজত আমীরকে প্রথমে চট্টগ্রামের চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এয়ার এম্বুলেন্স যুগে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল্লামা আহমদ শফী।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বদরুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
মরহুম আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি, নাতনি রয়েছে। তিনি ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে চার বছর হাদিস, তাফসির, ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
Leave a Reply