1. khaircox10@gmail.com : admin :
সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৬ কিশোর ফিরল যেভাবে - coxsbazartimes24.com
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
প্রকাশিত সংবাদে পাহাড়তলীর আবদুর রহমানের প্রতিবাদ কক্সবাজার হজ কাফেলার উদ্যোগে হজ ও ওমরাহ কর্মশালা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ রোহিঙ্গা রেসপন্সে বিশ্বব্যাংকের ঋণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকার-ভিত্তিক সুশীল সমাজ হযরত হাফসা (রাঃ) মহিলা হিফজ ও হযরত ওমর (রাঃ) হিফজ মাদ্রাসার দস্তারবন্দী অনুষ্ঠান নারী দিবসের অঙ্গীকার, গড়বো সমাজ সমতার – স্লোগানে মুখরিত কক্সবাজার প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে পেশকার পাড়ার ফরিদুল আলমের প্রতিবাদ কক্সবাজারে কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবস পালন ফুলছড়িতে বনভূমি দখল, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসার বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৬ কিশোর ফিরল যেভাবে

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০
  • ৩৮৭ বার ভিউ

কক্সবাজার টাইমস ২৪ ডেস্ক:
সংখ্যায় ওরা ছয় জন। জয়, সাইমুন, জুবায়ের, মাঈনুল, রহিম ও ইমরান। বয়সটা তাদের ১৬-১৭। দুজন ঢাকায় থাকে। বাকি চার জন গ্রামে। ঈদ উপলক্ষে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। যেই ভাবনা, সেই কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বুধবার (২৬ মে) সকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরে বেড়াতে আসে।

সকাল ১০টা। ধানসাগর লাগোয়া এলাকায় বনরক্ষীদের অফিস রয়েছে। পাশেই একটি ছোট খাল। খালের ওপাড়ে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের পুল রয়েছে। পুলটি সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এই সুন্দরবন পাহারা দিতে যে বনরক্ষীরা যান, কেবলমাত্র তারাই এটি ব্যবহার করেন।

ছয় কিশোর লোক চক্ষুর অন্তরালে পুল পার হয়ে খালের ওপারে চলে যায়। এরপর গল্প করতে করতে তারা সুন্দরবনের ভেতরে হাঁটতে থাকে।সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তাদের যে ফিরতে হবে, সেই ভাবনা-ই নেই। বিকেলে দূর থেকে ভেসে এলো আছরের আজানের শব্দ। এবার তাদের ফেরার কথা মনে হলো।

যেপথে তারা এসেছে, সেই পথে উল্টো দিকে কিছুদূর হাঁটলো।এরপর পথ হারালো তারা।বেরিয়ে আসার পরিবর্তে উল্টো বনের গহীনে যেতে লাগলো।এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছে না তারা। সেসময় তাদের মনে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো।

তাদের সঙ্গে ছিলো তিনটি মোবাইল ফোন। তাতে নেটওয়ার্ক আসে যায়। কল করে তাদের পরিবারকে জানালো নিজেদের দুর্দশার কথা। হারিয়ে যাওয়াদের দলের একজন বুদ্ধি করে পুলিশ পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করে। ৯৯৯ সঙ্গে সঙ্গে শরণখোলা থানার সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এদিকে নৌ-পুলিশকেও বিষয় অবহিত করা হয়। নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে বনের মধ্যে পথ হারানো কিশোরেরা তাদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ জানায়।

খবর পাওয়া মাত্রই শুরু হয় পুলিশের উদ্ধার অভিযান। কিন্তু এতবড় সুন্দরবনে কারও অবস্থান জানা তো সহজ সাধ্য নয়। ওদিকে ওই কিশোরদের সঙ্গে থাকা দুটি ফোন চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়।সচল কেবল একটি। সেটির মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যায় পুলিশ।

অভিযানের শুরুতেই কিশোরদের বনের মধ্যে হাঁটা চলা না করে গাছে চড়ে বসে থাকার জন্য পরামর্শ দেয় পুলিশ।কারণ বনের চাঁদপাই রেঞ্জের ওই অংশে বাঘের চলাচল রয়েছে। কিন্তু কিছু সময় পরই শুরু হলো বৃষ্টি। নেমে এলো বনের মধ্যে অন্ধকার। এতে আরও ভড়কে গেলো তারা। এর মধ্যেই তাদের ফোনের নেটওয়ার্কও চলে যায়।

ওদিকে মোবাইল ফোনে কল করার জন্য একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এভাবে কাটল ঘণ্টাখানেক। পুলিশ তাদের সঙ্গে পুনরায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। একপর্যায়ে তারা জানায়, মাইকে এশার আজানের শব্দ শুনেছে তারা।এ কথা শুনে নতুন করে পরিকল্পনা করে পুলিশ।

কিন্তু সমস্যাটা হলো বনের ওই এলাকার পাশের লোকালয়ে দুই পাশে দুটি মসজিদ আছে। কাজেই কোন মাইকের শব্দ তারা শুনতে পেলো, সেটি জানতে পারলে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। এবার একপাশের মসজিদের মাইক দিয়ে তাদের ডাকা হলো। আর ফোনে জানতে চাওয়া হলো, আওয়াজ শোনা যায় কিনা? জবাব এলো, খুবই কম। এবার বনের অন্য পাশের মসজিদের মাইক দিয়ে ডাকা হলো। এবার মোবাইল ফোনে কিশোরেরা জানালো, তুলনামূলক স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছে তারা। এটার মাধ্যমে বনের মধ্যে তাদের অবস্থানটি কিছুটা আঁচ করে নিলো পুলিশ। সুন্দরবনের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে ৩-৪ কিলোমিটার পর্যন্ত শব্দ শোনা যায়। আর রাতে সেটি আরও গহীন থেকে শোনা যায়। তাই সুন্দরবনের ৪-৫ কিলোমিটার ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগুতে থাকে পুলিশ।

সুন্দরবনের ভেতর হাঁটা সহজ নয়। কেওড়ার শ্বাসমূলের সঙ্গে লতাগুল্ম। ঝোপ-ঝাড় আর নানান ধরনের কাঁটা।রাতের অন্ধকারের সঙ্গে বৃষ্টি। পিচ্ছিল পথে এ যেন এক কণ্টকাকীর্ণ যাত্রা। কয়েক ঘন্টা ধরে সেই পথ পাড়ি দিয়ে বনের আরও ভেতরে গেল পুলিশ। এবার কল দিয়ে ওই কিশোরদের পুলিশ বললো, আমরা হাঁক দেব। যদি তোমরা শুনতে পাও তো তোমরাও হাঁক দেবে। পুলিশ বনের মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে হাঁক দিল। কিন্তু ওই পাশ থেকে সাড়া নেই। ঘন্টা খানেক পর ওপাশ থেকেই হাঁকের জবাব এলো। এবার পুলিশ বুঝতে পারলো, কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। হাঁক দিতে দিতে একসময় হারিয়ে যাওয়া কিশোরদের খুঁজে পায় পুলিশ। ততক্ষণে যে রাত তিনটা বেজে গেছে।

দীর্ঘক্ষণ বনের মধ্যে এমন প্রতিকূল পরিবেশে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল কিশোররা। পুলিশ ধরাধরি করে তাদের নিয়ে থানায় ফিরতে ফিরতে রাত পেরিয়ে ভোর। অনেকক্ষণ কিছু না খেতে পেরে আরও ক্লান্ত তারা। থানায় এনে প্রাথমিক শুশ্রূষার পাশাপাশি খাবার খেতে দেয় পুলিশ। এরপর সকালে মিষ্টিমুখ করিয়ে কিশোরদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়।

সন্তানদের ফিরে পেয়ে পরিবারের সদস্যদের চোখে তখন আনন্দঅশ্রু। বুকে সন্তানদের জড়িয়ে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য প্রাণভরে দোয়া করলেন তারা। জানালেন অশেষ কৃতজ্ঞতা।

থানা থেকে বিদায়বেলা হারিয়ে যাওয়া দলের এক তরুণ থমকে দাঁড়ালো। পুলিশকে লক্ষ্য করে বলল, বনের ভেতরে যখন হারিয়ে গিয়েছিলাম, তখন বারবার মনে হয়েছে এ জীবনে আর ফেরা হবে না। কিন্তু পুলিশের কারণে আমরা ছয় জন আবার নতুন জীবন পেলাম। আমি পড়াশোনা করে পুলিশ হতে চাই।বিপদে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।

খবরটি সবার মাঝে শেয়ার করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2020 coxsbazartimes24
Theme Customized By CoxsTech