মুহাম্মদ আবদুল্লাহ:
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের পরাজয়ে আমাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে। স্বাধীন ভূখণ্ড ও পতাকা পেয়েছি। দিনটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরব ও অহংকারের। কিন্তু সত্যি সত্যি আমরা মুক্তি কি পেয়েছি? আধিপত্যবাদী শক্তির নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়া কি সম্ভব হয়েছে?
৪৯ বছরে আমরা কতটুকু এগিয়েছি? আমাদের সমসাময়িককালে যেসব রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে তাদের বৈশ্বিক অবস্থান এখন কোথায়? আমরাইবা কোথায় দাঁড়িয়ে? শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন দেশে ধনবৈষম্য কি প্রকট হয়নি? কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে বটে। সব মানুষের জন্য সমান নিরাপদ জীবন, মৌলিক চাহিদা ও অধিকার কি নিশ্চিত করা গেছে? সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন এখনও কি পূরণ হয়েছে?
অস্বীকার করার উপায় কি আছে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর পরিবর্তে ভঙ্গুর হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এত বছর পরে এসেও নড়বড়ে দেখতে হচ্ছে। ভোটের অধিকার তথা গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজনীতি কবে সুস্থ ধারায় ফিরবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। আইনের শাসন অনুপস্থিত। যেসব ক্ষত থেকে মুক্তির জন্য জীবন ও সম্ভ্রম দিয়েছি, সে ক্ষতই আবার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে।
আমাদের আবেগ-উচ্ছ্বাস সবই দিবসকেন্দ্রিক। বিজয় দিবসেও আমরা উচ্ছ্বাস করব, নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করব, কিন্তু বিজয়ের মধ্য দিয়ে যা অর্জন করতে চেয়েছি তা কি অর্জন ও রক্ষা করতে পেরেছি? সামাজিক ন্যায় বিচার, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ, আইনের শাসন, সমতা-সাম্যের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সে লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে। বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা, মৌলিক ও মানবিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত। লেখার স্বাধীনতা, প্রাণখুলে বলার স্বাধীনতা অনুপস্থিত।
তবু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও পরিচয় উপহার দেওয়ার জন্য বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায়।
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ
সভাপতি,
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
Leave a Reply